কেন আমরা শয়তানের কথা শুনব না
এটা জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকের ঘটনা। আমি কয়েকটি সম্মেলনের বক্তব্য শেষ করে মাত্র বাড়িতে ফিরেছি। আমি সেই দিনে হতাশা এবং নিরুৎসাহ নিয়ে সকাল শুরু করলাম। আমার এই ধরণের চিন্তা হচ্ছিল যে: ‘‘আমার জীবনের আর কিছু বাকী নেই। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল বছরগুলো পার করে ফেলেছি। আমার মিনিস্ট্রি শেষ। আমার এমন মনে হচ্ছে যে ঈশ্বর আমাকে ভালাবাসেন না। ’’ কেন আমার মনে এই চিন্তাগুলো আসছে? এই চিন্তাগুলো কোথা থেকে এল? আর কিভাবেই বা আমি এই চিন্তাগুলো দূর করব? অবশ্য দিনের শেষে আমি ভালই ছিলাম। আমার অন্তর প্রফুল্ল ছিল এবং আমার মনে আশা ছিল। কিন্তু আমি এমন কি জানতাম বা আমি এমন কি করেছিলাম যেটি এই পরিবর্তন নিয়ে আসল? এটাই আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই যাতে করে আপনিও যেকোন ভয় বা নিরুৎসাহকে অথবা অন্য যেকোন আত্নিক যুদ্ধ যা আপনার উপর ইতোমধ্যে নেমে এসেছে সেগুলোর বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেন।
মিনিস্ট্রিতে আমার এত বছরের অভিজ্ঞতায় আমি শিখেছি যে আমাদের প্রত্যেকেরই আত্মার শত্রু আছে। আপনি হয়ত তাকে দেখতে পাবেন না, কিন্তু এটা আছে। ১ম পিতর ৫:৮ বলে যে,‘‘ নিজেদের দমনে রাখ ও সতর্ক থাক, কারণ তোমাদের শত্রু শয়তান গর্জনকারী সিংহের মত করে কাকে খেয়ে ফেলবে তার খোঁজ করে বেড়াচ্ছে।’’। এইভাবে আমরা তাকে ঈশ্বরের বাক্য এবং দৃঢ়তার দ্বারা প্রতিহত করি।
শয়তান কে?
আসলে শয়তান কে? সে হল সেই ব্যক্তি যাকে শাস্ত্রে ‘‘পাপাত্না’’ বলা হয়েছে। সে ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ না, সে ঈশ্বরের সমকক্ষ নয়, কারণ ঈশ্বরের কোন প্রতিরুপ নেই। ঈশ্বরের কোন সমকক্ষ নেই। শয়তান হল শুধুমাত্র ঈশ্বরের বিচারের আওতাধীন একজন স্বর্গদূত মাত্র। শয়তান খ্রীষ্টিয়ানদের উপর তার ক্ষমতা দেখাতে চেষ্টা করে, কিন্তু আমাদেরকে বলা হয়েছে যে,‘‘এই জগতে যে আছে, তার চেয়ে যিনি তোমাদের অন্তরে আছেন তিনি মহান।’’ (১ম যোহন ৪:৪)
তবুও শয়তান খ্রীষ্টিয়ানদেরকে দুর্বল করার চেষ্টা চালায়। সে আমাদেরকে পাপের প্রলোভন দেখায় এবং ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা থেকে দূরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। সে আমাদের শত্রু আমরা তাকে দেখতে পাই না, কিন্তু সে সবসময়ই আছে। যীশু নিজেও এই প্রার্থনা করেছেন যে পিতা যেন আমাদেরকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করেন। (যোহন ১৭:১৫)
শাস্ত্রে শয়তানকে দোষারোপকারী, নিন্দুক, সকল মিথ্যার স্রষ্টা, খুনী, প্রলোভনকারী, শত্রু বলা হয়েছে। ইফিষীয়তে পৌল বলেছেন,‘‘ আমাদের এই যুদ্ধ তো কোন মানুষের বিরুদ্ধে নয়, বরং তা অন্ধকার রাজ্যের সব শাসনকর্তা ও ক্ষমতার অধিকারীদের বিরুদ্ধে, অন্ধকার জগতের শক্তিশালী আত্মাদের বিরুদ্ধে, আর আকাশের সমস্ত মন্দ আত্মাদের বিরুদ্ধে।’’ (ইফিষীয় ৬:১২) আমরা সকলেই কিছু না কিছুর বিরুদ্ধে। ২য় করিন্থীয় ২:১১, পৌল বলেছেন যে যেন শয়তান আমাদের উপরে কোন সুযোগ-সুবিধা না পায়। তার মতলবের কথা তো আমাদের অজানা নেই।
আমাদেরও ভয় পাবার কিছু নেই। আমি আপনাকে কখনই অন্ধকারের দিকে যেতে বলব না, যদিও এই অন্ধকারের অস্তিত্ব সত্যিই রয়েছে। এর পরিবর্তে আমি চাই যে, খ্রীষ্টে আমরা যে বিজয় লাভ করেছি, যে সত্য এবং নিরাপত্তা আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে সেটা যেন আপনি জানতে পারেন।
শয়তান আসলে কিভাবে কাজ করে? প্রাথমিকভাবে, শয়তানের কাজ হল সে আমাদের সাথে ছলনা করার চেষ্টা চালায়—সে কোন কিছুকে এমনভাবে দেখায় যেটাকে দেখে মনে হয় সত্যি, কিন্তু আসলে সেই সত্যটা একেবারেই মিথ্যা; এটা আসলে একটা ছলনা। ফ্রিডম ইন ক্রাইস্ট মিনিস্ট্রির ড. নেইল এন্ডারসন এ সম্পর্কে খুবই সাহায্যকারী পর্যবেক্ষণ করেছেন।
বাইবেল শয়তানকে তিনভাবে বর্ণনা করে:
- ছলনাকারী (মথি ৪:৩)
- দোষারোপকারী (প্রকাশিত বাক্য ১২:১০)
- সকল মিথ্যার স্রষ্টা (যোহন ৮:৪৪)
ড. এন্ডারসন পর্যবেক্ষণ করেছেন যে,‘‘যদি আমি আপনাকে প্রলোভন দেখাই, তাহলে আপনি সেটা বুঝতে পারবেন। যদি আমি আপনাকে দোষারোপ করি তাহলেও আপনি বুঝতে পারবেন। কিন্তু আমি যদি আপনার সাথে ছলনা করি, তাহলে আপনি তা বুঝতেই পারবেন না। মিথ্যের মধ্যেই শয়তানের ক্ষমতা নিহিত। যদি আপনি এই মিথ্যাকে সরিয়ে দেন তাহলে আপনি তার ক্ষমতাকেও সরিয়ে দিতে পারবেন।’’
শয়তানের সান্ত্বনা
কিভাবে আমরা শয়তানের মিথ্যাগুলোকে সান্ত্বনা হিসেবে নিই? আমরা ঈশ্বর কি বলেন সেটার দিকে দেখি। তো, যখন আপনি নিজেকে যখন পুরোনো একজন খ্রীষ্টিয়ান মনে করছেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেহেতু আপনি প্রার্থনা বা ঈশ্বরের বাক্যের সাথে সময় কাটান নি, বা আপনি এটা মনে করছেন যে কোনভাবে ঈশ্বরের আশাকে ভেঙ্গে দিয়েছেন বলে আর আপনি এটা ভাবতে শুরু করেছেন যে,‘‘ নিশ্চয়ই ঈশ্বর আমার প্রতি অনেক মন:ক্ষুন্ন হয়েছেন, তিনি হয়ত আমার প্রতি আশা ছেড়ে দেবেন।’’ দেখুন, এইক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাক্য কি বলে? ‘‘তোমাদের অন্তরে যিনি ভাল কাজ করতে আরম্ভ করেছেন তিনি খ্রীষ্ট যীশুর আসবার দিন পর্যন্ত তা চালিয়ে নিয়ে শেষ করবেন।’’ (ফিলিপীয় ১:৬) এবং ‘‘যারা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বর তাদের আর শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন না।’’ (রোমীয় ৮:১)
অথবা আপনি এটাও ভাবতে পারেন যে,‘‘ঈশ্বর আসলে আমাকে ভালবাসেন না। যদি তিনি আমাকে ভালবাসতেন তাহলে আমি এত সমস্যার সম্মুখীন হতাম না।’’ এটাকে হয়ত সত্য মনে হতে পারে, কিন্তু এখানে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কি বলে? যীশু বলেছেন,‘‘ পিতা যেমন আমাকে ভালবেসেছেন আমিও তেমনি তোমাদের ভালবেসেছি।’’ (যোহন ১৫:৯) ‘‘আমরা যে ঈশ্বরকে ভালবেসেছিলাম তা নয়, কিন্তু তিনি আমাদের ভালবেসে তাঁর পুত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন,… এটাই ভালবাসা।’’ (১ম যোহন ৪:১০) ‘‘দেখ, পিতা ঈশ্বর আমাদের কত ভালবাসেন! তিনি আমাদের তাঁর সন্তান বলে ডাকেন, আর আসলে আমরা তা-ই।’’ (১ম যোহন ৩:১)
অথবা, যদি বলি যে আপনি আপনার পাপের কারণে আপনি নিরুৎসাহিত হয়েছেন এবং শয়তান আপনাকে দোষারোপ করছে, সে আপনাকে বলছে যে ঈশ্বর আর কখনই আপনাকে ক্ষমা করবেন না। এটা একটা মিথ্যা। আমরা কিভাবে জানলাম? ঈশ্বরের বাক্য কি বলে? ‘‘যদি আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি তবে তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে আমাদের শুচি করেন, কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য এবং কখনও অন্যায় করেন না।’’ (১ম যোহন ১:৯)
এখানে আরও একটি উদাহরণ দেওয়া হল। ধরুন, কাউকে আপনার ভাল লাগল, আর সেই ব্যক্তিটিই আপনাকে বলছে, ‘‘যেহেতূ আমরা একে অন্যকে এতটা ভালবাসি সেহেতু আমরা যদি শারীরিকভাবে একে অন্যের কাছে আসি তাহলে সেটা ঈশ্বরের কাছে কোন সমস্যাই হবে না।’’ কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য কি বলে? ‘‘প্রত্যেকে যেন বিয়ের ব্যাপারটাকে সম্মানের চোখে দেখে। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের সম্বন্ধ পবিত্র রাখা উচিত, কারণ যে কোন রকম ব্যভিচার হোক না কেন, যারা সেই দোষে দোষী ঈশ্বর তাদের শাস্তি দেবেন।’’ (ইব্রীয় ১৩:৪) ‘‘ঈশ্বরের ইচ্ছা এই-তোমরা পবিত্র হও, অর্থাৎ সব রকম ব্যভিচার থেকে দূরে থাক,আর যারা ঈশ্বরকে জানে না সেই অযিহূদীদের মত দেহের কামনার বশে না চলে তোমরা প্রত্যেকে নিজের দেহকে পবিত্রভাবে সম্মানের সংগে দমনে রাখতে শেখ।’’ (১ম থিষলনীকীয় ৪:৩-৫)
আমরা আমাদের অনুভূতি বা চিন্তাগুলো বা শয়তানের মিথ্যাগুলোকে সত্যের দিকে নিয়ে যেতে দেই না। আমরা যা অনুভব করি, আমরা যা চিন্তা করি বা দেখি তার চেয়েও ঈশ্বরের বাক্য অনেক বেশি সত্য। শয়তান আমাদের চিন্তাকে আড়াল করে রাখতে চায়, সে আমাদের এটা ভাবাতে চেষ্টা করে যে ঈশ্বর আমাদেরকে কোন কিছু থেকে বঞ্চিত করছেন। কিন্তু ঈশ্বরই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদেরকে ভালবেসে তাঁর পুত্রকে আমাদের জন্য বলি হওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। শয়তানের মিথ্যার সাথে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আপনাকে সত্য জানতে হবে।
ঈশ্বরের বাক্য আপনাকে মুক্ত করার আগে আপনাকে তাঁর বাক্য জানতেই হবে। আমাদেরকে শয়তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, ‘‘বিশ্বাসে রুখে দাঁড়াও…’ (১ম পিতর ৫:৯) বিশ্বাস কোন অনুভূতি নয়। এটা হল একটি সিদ্ধান্ত যেখানে আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যানুসারে চলতেই হবে। আত্নিক যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য আমাদেরকে সেইসব চিন্তাগুলো, সেইসব অনুভূতি এবং প্রলোভনগুলোকে নিয়ে এটা জিজ্ঞাসা করতে হবে যে,‘‘ঈশ্বর এইসব বিষয় সম্বন্ধে কি বলেন?’’ যোহন ১৭ অধ্যায়ে, যখন যীশু পিতার কাছে এই প্রার্থনা করেছিলেন,‘‘তুমি শয়তানের হাত থেকে এদেরকে রক্ষা কর,’’ আপনি কি জানেন যীশু এর পরপরই কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন,‘‘ সত্যের দ্বারা তোমারই উদ্দেশ্যে তুমি তাদের আলাদা করে রাখ। তোমার বাক্যই সেই সত্য।’’(যোহন ১৭:১৭) আর যীশু এও বলেছিলেন,‘‘ আপনারা সত্যকে জানতে পারবেন, আর সেই সত্যই আপনাদের মুক্ত করবে।’’(যোহন ৮:৩২)
আমি এটা খুঁজে পেয়েছি যে, যারা খ্রীষ্টে আছেন সেটা জানাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইফিষীয় পুস্তকে, পৌল লিখেছেন,‘‘ আমি আরও প্রার্থনা করি যেন তোমাদের অন্তরের চোখ খুলে যায়, যাতে তাঁর ডাকের ফলে তোমাদের অন্তরে যে আশা জেগেছে তা তোমরা বুঝতে পার;… তাঁর কাছে তাঁর লোকেরা কত বড় একটা সম্পত্তি এবং আমরা যারা বিশ্বাসী আমাদের অন্তরে তাঁর কত বড় শক্তি কাজ করছে।’’ (ইফিষীয় ১:১৮,১৯) ঈশ্বর আমাদের মধ্যেই বাস করেন এবং আমাদেরকে শক্তি যোগান।
তাহলে যখন আমরা নিজেদের সম্বন্ধে বা ঈশ্বরের সম্বন্ধে অথবা অন্যদের সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা করি তখন আমরা কি করব? ইফিষীয় ৬:১৬ বলে যে,‘‘… বিশ্বাসের ঢালও তুলে নাও; সেই ঢাল দিয়ে তোমরা শয়তানের সব জ্বলন্ত তীর নিভিয়ে ফেলতে পারবে।’’ এটা বলছে যে আমরা শয়তানের সব জলন্ত তীর নিভিয়ে ফেলতে পারব। এগুলো হল এমন ধরণের চিন্তা-ভাবনা যেগুলোর কোন উৎস নেই—জলন্ত তীরের মত। আমরা কিভাবে এগুলোর মোকবিলা করব? লক্ষ করুন, এটি বলছে যে,‘‘বিশ্বাসের ঢাল তুলে নাও।’’ আমাদেরকে এটাই করতে হবে। আত্নিক যুদ্ধে আমরা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না। যাকোব ৪:৭ বলে যে,‘‘ শয়তানকে রুখে দাঁড়াও, তাহলে সে তোমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে।’’ আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যকে কার্যকরীভাবে কাজে লাগাতে হবে। যদি আপনাকে জলন্ত তীরের দ্বারা আক্রমণ করা হয় তাহলে এটি আপনার মনকেই নিশানা করবে।
আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে আপনি হয়ত এমন কোন প্রলোভনে পড়েছিলেন, যেখানে শয়তান আপনাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছে যে এই প্রলোভনটা প্রতিরোধ করা অনেক বেশি কঠিন? এই ক্ষেত্রে চমৎকার একটি পদ রয়েছে, যাতে করে আপনি এইসব মুহূর্তে এই পদটিকে স্মরণ করতে পারেন, পদটি হল: ‘‘মানুষের জীবনে যে সব পরীক্ষা হয়ে থাকে তা ছাড়া আর অন্য কোন পরীক্ষা তো তোমাদের উপর হয় নি। ঈশ্বর বিশ্বাসযোগ্য; সহ্যের অতিরিক্ত পরীক্ষা তিনি তোমাদের উপর হতে দেবেন না, বরং পরীক্ষার সংগে সংগে তা থেকে বের হয়ে আসবার একটা পথও তিনি করে দেবেন যেন তোমরা তা সহ্য করতে পার।’’ (১ম করিন্থীয় ১০:১৩)
চিন্তাগুলোকে বন্দী করা
শয়তান আমাদের মন পড়তে পারে না, কিন্তু সে আমাদের মনে কুচিন্তা প্রবেশ করাতে পারে। ২য় করিন্থীয় ১০:৫ বলে যে:‘‘… আমরা মনের প্রত্যেকটি চিন্তাকে বন্দী করে খ্রীষ্টের বাধ্য করি।’’ ঠিক আছে, তাহলে কি ধরণের চিন্তাকে আমাদের বন্দী করতে হবে? ঈশ্বর আপনাকে যা করতে বলেছেন সেটার বিপরীত চিন্তাগুলোকে আপনার বন্দী করতে হবে। ঈশ্বরের নিজের সম্বন্ধে এবং অন্যের সম্বন্ধে যা বলেছেন তার বিপরীত চিন্তাগুলোকে আপনার বন্দী করতে হবে।
চিন্তাগুলোই কাজে পরিণত হতে পারে; কাজগুলো অভ্যাসে পরিণত হতে পারে। আর এই সবকিছুর শুরু হয় শুধুমাত্র একটা ভাবনা থেকে। ঈশ্বর চান যেন আমরা আমাদের অনুভূতির থেকেও তাঁর বাক্যের উপর বেশি বিশ্বাস করি, কিছু বিষয়গুলোকে যেভাবে আমরা দেখি সেটার চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি। আমি যেটা চিন্তা করতে যাচ্ছি ঈশ্বরের বাক্য তার থেকেও বেশি সত্য। আমি যা ই অনুভব করি না কেন এটা সেটার থেকেও বেশি সত্য। বিষয়গুলো যেভাবে আমাদের কাছে প্রদর্শিত হয় এটা তার থেকেও বেশি সত্য। বাইবেল বলে যে,‘‘ ঘাস শুকিয়ে যায় আর ফুলও ঝরে পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকে।’’ গীতসংহিতায় দায়ূদ বলেছেন,‘‘ তোমার বাক্য…আমার চলার পথের আলো।’’ (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫)
শোনা এবং কাজ করার গুরুত্বের বিষয়ে যীশু এই দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, তিনি বলেছেন,‘‘ সেইজন্য বলি, যে কেউ আমার এই সমস্ত কথা শুনে তা পালন করে সে এমন একজন বুদ্ধিমান লোকের মত, যে পাথরের উপরে তার ঘর তৈরী করল।পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা আসল, ঝড় বইল এবং সেই ঘরের উপরে আঘাত করল; কিন্তু সেই ঘরটা পড়ল না কারণ তা পাথরের উপরে তৈরী করা হয়েছিল। যে কেউ আমার এই সমস্ত কথা শুনে তা পালন না করে সে এমন একজন মূর্খ লোকের মত, যে বালির উপরে তার ঘর তৈরী করল।’’ (মথি ৭:২৪,২৫) যীশু আরও বলেছেন,‘‘ আমি আমার পিতার সমস্ত আদেশ পালন করে যেমন তাঁর ভালবাসার মধ্যে রয়েছি, তেমনি তোমরাও যদি আমার আদেশ পালন কর তবে তোমরাও আমার ভালবাসার মধ্যে থাকবে। এই সব কথা আমি তোমাদের বললাম যেন আমার আনন্দ তোমাদের অন্তরে থাকে ও তোমাদের আনন্দ পূর্ণ হয় ‘’ (যোহন ১৫:১০,১১)
আমরা যেকোন পরিস্থিতিতে, যেকোন চিন্তা বা অনুভূতির বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের আশ্রয়-পাহাড়ের দিকে ফিরতে পারি, (গীতসংগিতা ১৮:৪৬), যিনি আমাদেরকে ভালবাসেন এবং আমাদেরকে পূর্ণ সত্যের দিকে নিয়ে যাবেন। (যোহন ১৬:১৩) হয়ত শয়তান আপনাকে প্রলোভন দেখাতে পারে, আপনাকে নিরুৎসাহিত করতে পারে, আপনাকে হারিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সে একজন মিথ্যাবাদী, আর আমাদেরকে ঈশ্বরের সত্য বাক্যের দ্বারা শয়তানের এই মিথ্যার মোকাবিলা করতে হবে। যখন আমরা সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের বাক্যের ঢাল নেব, তখনই আমরা খ্রীষ্টে জয়ী হব।
‘‘ইস্রায়েল জাতি যখন মিসর থেকে বের হয়ে আসল,
ভিন্ন ভাষায় কথা বলা লোকদের মধ্য থেকে
যাকোবের বংশ যখন বের হয়ে আসল,
তখন যিহূদা হল ঈশ্বরের পবিত্র স্থান,
ইস্রায়েল হল তাঁর রাজ্য।’’
গীতসংহিতা ১১৪:১,২
‘‘আমি সব সময় সদাপ্রভুর গৌরব করব;
আমার মুখে তাঁর গুণগান লেগেই থাকবে।
তোমরা আমার সংগে সদাপ্রভুর মহিমার কথা বল;
এস, আমরা একসংগে তাঁর গৌরব করি।
আমি সদাপ্রভুকে ডাকলাম,
তিনি আমার ডাকে সাড়া দিলেন;
আমার সমস্ত ভয় থেকে তিনি আমাকে উদ্ধার করলেন।
স্বাদ নিয়ে দেখ সদাপ্রভু মংগলময়;
ধন্য সেই লোক, যে তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয়।
যে ন্যায় পথে চলে তার বিপদ অনেক হলেও
সেই সব থেকে সদাপ্রভুই তাকে উদ্ধার করেন।
গীতসংহিতা ৩৪:১,৩,৪,৮,১৯
সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দেওয়া,
তোমার প্রশংসা-গান করা,
সকালে তোমার অটল ভালবাসার কথা
আর রাতে তোমার বিশ্বস্ততার কথা প্রচার করা
কত না আনন্দের ব্যাপার!
গীতসংহিতা ৯২:১,২
থেকে ফেইথ ইজ নট এ ফিলিং এর গ্রন্থস্বত্ব। ©২০০৪ ন্যই বেইলীর লেখা। সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত।